পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্য সম্মত মাছ উৎপাদন, শুধু মাছ চাষকালীন সময়ে উত্তম অনুশীলনের মাঝে সিমাবদ্ধ রাখা যথাযথ নয়। চাষ পরবর্তী বাজারজাতকরন প্রক্রিয়া ও ক্রেতা কর্তৃক পন্য, খাদ্য উপযোগী প্রক্রিয়াজাতকরনের মাঝে যে মাছের বর্জ্য (আঁশ, পাখনা, চামড়া) উপজাত (বাইপ্রোডাক্ট) পদার্থ উৎপন্ন হয় তা যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষন হয় অন্য দিকে উপজাত উপাদান হতে পন্য উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায় না।
মাছের মোট দেহ ওজনের ২-৩% আঁশ, এই পরিমাণ আঁশ হতে ১৫-২০% জিলেটিন উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ একটি ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম ওজনের মাছ হতে ২০-৩০ গ্রাম আঁশ পাওয়া যায় এবং যা হতে ৪-৬ গ্রাম জিলেটিন পাউডার পাওয়া যায়। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট আঁশের ৩০% দেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং বাকি ৭০% বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয় যা পরিবেশের দূষণের পাশাপাশি রোগ জীবাণু ছড়ায়। আবার দেশে প্রক্রিয়াজাতকৃত ৩০% আঁশের ৯০% রপ্তানি করা হয় এবং অবশিষ্ট ১০% মাছ-মুরগীর খাদ্য বা সার শিল্পে ব্যবহৃত হয়। মাছের আঁশ, পাখনা, কাটা, হাড় ইত্যাদি হতে বিভিন্ন কেমিক্যাল ওয়াশ ও তাপ প্রদান করে কোলাজেন প্রোটিন সিগমেন্ট আলাদা করা হয়। তারপর এই কোলাজেন প্রোটিনের চেনকে হাইড্রোলাইসিসের মাধ্যমে ভেঙে জিলেটিন পাউডার উৎপন্ন করা হয়।
এ সুচিন্তিত পরিকল্পনা হতে পরবর্তী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তায় টিএমএসএস কর্তৃক বাস্তবায়িত সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি) প্রকল্পের আওতায় “পরিবেশ বান্ধব মাৎস্য উদ্যোগ উন্নয়ন” উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাগারে মাছের আঁশ হতে জিলেটিন উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
State University of Bangladesh এর Dept. of Food Engineering & Tech. এর Associate Professor & Head ড. মোঃ শাফিউর রহমানকে Consultant হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। গবেষকের গবেষণা এবং এসইপি-ফিশারীজ, পিকেএসএফ ও টিএমএসএস টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফল অদ্য ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে বগুড়ার হোটেল মমইন এর দ্যা রাউন্ড টেবিল, হাট-২, লেভেল-৪ এ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব কালি পদ রায়সহ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, আদমদীঘি ও কাহালু ও টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক জনাব হোসনে-আরা বেগম, উপ-নির্বাহী পরিচালক-০১, ০২, ০৩ সহ সর্বস্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপনা শেষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব কালিপদ রায় প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যে কোন কাজে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক জনাব হোসনে-আরা বেগম প্রকল্পের শুভকামনা ও সফলতার আশাবাদ এবং অচিরেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিবেচনায় সংস্থা পর্যায়ে মাছের আঁশ হতে জিলেটিন উৎপাদন প্ল্যান্ট/কারখানা স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।